Murshidabad Election: চব্বিশের ভোটের মিল চারের সেই ভোটের সাথেও

Murshidabad Election সেবার বহরমপুরের পাশাপাশি  মুর্শিদাবাদের অপর দুই কেন্দ্র জঙ্গীপুরে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও মুর্শিদাবাদ লোকসভায় মান্নান হোসেনকে জিতিয়ে এনে মুর্শিদাবাদ জেলায় সিপিএম ও আরএসপির লাল  দুর্গ  দখল করে নেয় কংগ্রেস। এবার ? ভোটের কলম ধরলেন সাংবাদিক প্রাণময় ব্রহ্মচারী।

 

Murshidabad Election “ একা অধীরে রক্ষে নেই। প্রণব, মান্নান  তার দোসর”।  ২০০৪ সালের বহরমপুর, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের ফলাফল দেখে অনেকেই বলেছেন এই কথা। ২০০৪ সালে একমাত্র কেতুগ্রাম  বিধানসভায় ১২,২৩১ ভোটে পিছিয়েও বাকি ৬টি  বিধানসভায়  ১লাখ ১১হাজার ৩৩৩ ভোটে এগিয়ে মোট ৯৯হাজার ২০২ ভোটে ফের বহরমপুরে জিতে অধীর চৌধুরী ( Adhir Chowdhury)  লাগিয়েছিলেন।   সেবার ভোটে চমক লাগিয়ে    প্রণব  মুখোপাধ্যায়কে ( Pranab Mukherjee)  জঙ্গিপুরে প্রার্থী  করে অধীর চৌধুরী   শ্লোগান দিয়েছিলেন,  “ মুর্শিদাবাদে তিনে তিন”।

সেই  স্লোগানকে সফল করে দিয়েছিলেন অধীর।  সেবার বহরমপুরের পাশাপাশি  মুর্শিদাবাদের অপর দুই কেন্দ্র জঙ্গীপুরে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও মুর্শিদাবাদ লোকসভায় মান্নান হোসেনকে জিতিয়ে এনে মুর্শিদাবাদ জেলায় সিপিএম ও আরএসপির লাল  দুর্গ  দখল করে নেয় কংগ্রেস।

তবে  মুর্শিদাবাদ জেলা দখলের “ব্লুপ্রিন্ট”  ও প্রদীপের  সলতে অবশ্য  এক বছর আগেথেকেই  পাকানো শুরু হয়ে গিয়েছিল ।

মুর্শিদাবাদ জেলাবাসীর জ্বলন্ত  সমস্যা গঙ্গা পদ্মা নদী ভাঙ্গনকে ইস্যু করে  ফরাক্কা  থেকে  জলঙ্গি পদযাত্রায় প্রণব  মুখোপাধ্যায়কে সামিল করে  সব কংগ্রেসিদের এককাট্টা করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন  অধীর চৌধুরী ।   কার্যত, ছাত্রাবস্থায় নকশাল আন্দোলনে হাতেখড়ি হয়েছিল  অধীর চৌধুরীর ।  চারু মজুমদারের বিখ্যাত সেই  শ্লোগান “ গ্রাম দিয়ে  শহর ঘেরো”  নিজের   মতো বাস্তবায়ন করে সিপিএমের  অস্ত্রেই সিপিএমকে ঘায়েল  করেছেন অধীর।

২০০৩ সালে  গ্রামের  মানুষের  সরকার ২৫৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০৪ টি, ২৬টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে  মধ্যে ১৩টি পঞ্চায়েতসমিতি  ও মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের মোট ৩৩টি আসনের মধ্যে ২৩টি কংগ্রেস প্রথমবার দখল করে কংগ্রেস। দলে  গোষ্ঠী কোন্দলও  মিটিয়ে আনা হয়। গ্রাম বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের প্রায়  এক বছর আগেই ভোটের  ময়দানে নামিয়ে দিয়েছিলেন ।  ফলে ২০০৪ সালে ফল ও মিলেছিল  হাতেহাতেই।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট দিল্লির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে প্রথমবার ২০০৪ সালে  প্রার্থী করে রাজনৈতিক ফাটকাবাজিতে কিস্তিমাত করে ছিলেন  অধীর চৌধুরী।  যদিও  প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথমে লোকসভার ভোটে দাঁড়াতে রাজি হননি।  “দিল্লি দরবারের চাণক্য”  ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে  পর পর  দু’দুবার মালদহ ও বোলপুর আসনে সিপিএমের কাছে গো হারান হেরে আর লোকসভা ভোটমুখো হননি ।

তার নিজের ভাষায়,  “ আমি তো শিকড়হীন ভ্রমণকারী”।   তবে  অধীর চৌধুরী, ফরাক্কার তদানীন্তন বিধায়ক  মইনুল হক, সুতির মহম্মদ সোহরাররা নাছোড়বান্দা হয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে জঙ্গিপুরে ভোটে লড়তে নিমরাজি করেছিলেন ।

২০০৪ সালে  জঙ্গিপুরে প্রণব মুখোপাধ্যায়  সব বিধানসভায়  সিপিএমের  সাংসদ আবুল হাসনাত খানকে টক্কর দিয়ে  ৩২ হাজার ৩৯৬ ভোটের ব্যাবধানে  প্রথমবার   তিনি  লোকসভায়  জিতেছিলেন ।   প্রণব মুখোপাধ্যায়   পেয়েছিলেন  ৪,২৫,৪৭৮ ভোট  আর আবুল হাসনাত খান পেয়েছিলেন ৩,৯৩,০৮২ ভোট ।

জঙ্গিপুর লোকসভায় প্রথমবার জিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়  আপ্লূত হয়ে  বলেছিলেন,  “ অধীর চৌধুরীর বদান্যতায় ,জঙ্গীপুরের মানুষ আমার মতো শিকড়হীন পর্যটককে  শিকড়ের সন্ধান দিয়েছে, তার জন্য  আমি  চির কৃতজ্ঞ। আমি এখানে থাকতে এসেছি ”।  সত্যিই তার এই প্রতিশ্রুতি নিছক ফানুস ছিল  না।  প্রায় প্রতি  মাসে, এমনকি প্রায় প্রতি সপ্তাহে সেই  দিল্লি  থেকে  মুর্শিদাবাদ সফর করতেন প্রণব।

আক্ষরিক অর্থেই জঙ্গিপুরে বাড়ি বানিয়ে সেখানে ও বহরমপুর সার্কিট হাউসকে পাকাপাকি বাসস্থান  বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।

শুধু তাই  নয়,লোকসভায় প্রথমবার জিতেই দলনেতার পদ ও সামলেছিলেন ।  এবার   মুর্শিদাবাদ লোকসভার কথায় আসা যাক।  কংগ্রেসের লড়াকু নেতা, ভূমিপুত্র মান্নান হোসেন  বারবার লোকসভা,  বিধানসভায়  ভোটে দাঁড়ালেও কেবলমাত্র ১৯৮৭ সালে   ফরোয়ার্ড ব্লকের ছায়া ঘোষের বিরুদ্ধে  সিপিএমের গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার সুয়োগে  লালবাগ বিধানসভা আসনে  থেকে জিততেঁ পেড়েছিলেন। অপ্রিয় হলেও সত্যি, বারবার   আসন পাল্টিয়ে   হারাটাই যেন    অভ্যেসে পরিনত হয়ে গিয়েছিল মান্নান হোসেনের।

কিন্তু  ২০০৪ সালের ভোটে  কাঁটায় কাঁটায়  লড়াইয়ে তৎকালীন সিপিএমের জবরদস্ত  দুবারের   সাংসদ মইনুল হাসানকে ( এখন  অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসে) ১৬ হাজার ৪০৪ ভোটে হারিয়ে  দিল্লির পার্লামেন্ট ভবনে প্রথমবার  ঢোকার গেটপাস  জিতে নেন মান্নান হোসেন।   তিনি  পেয়েছিলেন  ৪৬০,৫৩৯ ভোট আর মইনুল হাসান পেয়েছিলেন ৪৪৪,১৩৫ টি ভোট ।

অধীর চৌধুরী  বলেছিলেন,   “ এবার  মান্নানদার ও হেরো বদনাম ঘুচল”।

মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস   তিনে তিন  হওয়ার পর  কবি সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের “আমরা”  কবিতার লাইন ধার করে মুর্শিদাবাদের   কংগ্রেসীরা বলতেন, “বাঘের ( সিপিএমের) সাথে  যুদ্ধ  করিয়া আমরা বাঁচিয়া  আছি / আমরা নাগেরে খেলাই, নাগেরই  ( বাম ও অন্যান্য  দলের)  মাথায়  নাচি”।

মনে রাখতে  হবে,   ২০০৪ সালের অনিল বিশ্বাস, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুদের নেতৃত্বে  সিপিএমের ও বামদুর্গর কথা  বলা হচ্ছে ।  ২০২৪ সালের  শূন্য বামেদের কথা নয়।  তখনও মুর্শিদাবাদ সহ সারা বাংলায় “সিপিএমের কথায়  বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেতো”।

২০১৪ সালে মুর্শিদাবাদ আসনটি মান্নান হোসেনকে হারিয়ে  ফের   ৫  বছরের জন্য সিপিএমের   বদরুদ্দোজা খান পুনরুদ্ধার করলেও ফের ২০১৯ সালে  শূন্য  হতে হয়েছে।  বহরমপুর ও জঙ্গিপুর আসন দুটি  এখনো বামেদের অধরা থেকেই গিয়েছে।  শুধু  তাই  নয় এবার ভোটে ইন্ডিয়া জোটের স্বার্থে  বিজেপি ও   তৃণমূল কংগ্রেসের জুজু ঠেকাতে আসন দুটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছে।

২০০৪ সালের মতো ২০২৪ সালে ও ভোটের মিল লক্ষ্য করা  যায়।   এবারেও  দুই দলের  “জোট পার্টি”র   সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মুর্শিদাবাদ সিপিএম প্রার্থী  মহম্মদ সেলিম ও কংগ্রেসের  মুর্তজা  হোসেন  বকুলকে জেতানো ও নিজের  আসন ধরে রাখার গুরু দায়িত্ব  অধীর চৌধুরীর কাঁধেই  চেপেছে ।  এখন অধীর চৌধুরীর ধারালো চাকুর উপর দিয়ে হাঁটার    মতো অবস্থা ।   সবাই মিলে জিতলে ফক্কা আর হারলে অক্কা ।

( বিধি সম্মত  সতর্কীকরণ: এই প্রতিবেদনে কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তিকে গৌরবান্বিত বা ছোট করার  অপচেষ্টা হয় নি।  বরং ২০ বছর  আগের ভোটের চালচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা  করা  হয়েছে মাত্র ।  তথ্য সূত্র :নির্বাচন কমিশন,  গুগল, উইকিপিডিয়া  ইত্যাদি)