Murshidabad politics:মুর্শিদাবাদ, জঙ্গীপুর লোকসভায় ফটো ফিনিশ ! শ্রমিকদের হাতে জয়ের চাবিকাঠি!

Murshidabad politicsএকদিকে গ্রীষ্মের দাবদাহ,পরিয়ায়ী শ্রমিকদের  বিরাট  সংখ্যায় অনুপস্থিতির আশংকা, বিড়ি  শ্রমিকদের ভোট ভাগাভাগি  সব মিলিয়ে  কেমন হবে ভোট ? লিখলেন প্রাণময় ব্রহ্মচারী।

 

Murshidabad politics: তীব্র দাবদাহের আবহে  মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গীপুর লোকসভায় প্রচার শেষ ।  এখন ঘন্টা কয়েক বাদেই   ৭ মে তৃতীয় দফায়   ভোটের অপেক্ষা।  তবে  সব দলের প্রার্থীরাই  মুখে “জিতছেন”   বলে দাবি করলেও  তীব্র দাবদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে  পরিযায়ী ও বিড়ি  শ্রমিকদের   শ্রমিকদের  ভোটের সিংহভাগ   কোন দিকে যাবে  তার হিসাব মেলাতেই তারা  এখন  ব্যস্ত ।   মুর্শিদাবাদ,জঙ্গীপুর এই দুটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে  মুর্শিদাবাদ  কেন্দ্রে মোট ভোটার  ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ০৯১ জন,ও জঙ্গীপুরে ১৮,০৪,৭৬৫ জন ভোটার।

জেলায়    পরিযায়ী প্রায় ৭ – ৮ লক্ষ  পরিয়ায়ী শ্রমিক  ।  বিড়ি  শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায়  আরও ১০ লক্ষ।   তাই  বলার অপেক্ষা  রাখেনা এই দুই ধরনের শ্রমিকদের হাতেই  রয়েছে এই দুই কেন্দ্রে   জয়ের চাবিকাঠি ।   ২০১৯ এর ভোটে রাজ্যের  শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এদের বেশির ভাগ   ভোটে আসন দুটি  দখল করেছিলও মুর্শিদাবাদে  আবু তহের  খান Abu Taher Khan  ২,২৬,৪১৭  ও জঙ্গীপুরে খলিলুর রহমান Khalilur Rahaman  ২,৪৫, ৭৮২ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।  এবার ভোটে কি হবে,   এই আসনদুটি তারা  ধরে রাখতে পারবেন   কিনা, নাকি জোট পার্টি  কংগ্রেস-  সিপিএম ফের তাদের  হারানো সাম্রাজ্য  উদ্ধার  করতে পারে তার উত্তর দেবে জনগণ ।    সংখ্যালঘু অধ্যুষিত  এই দুই কেন্দ্রের সংখ্যালঘু হিন্দু ভোটকে এক কাট্টা করে ও মুসলিম ভোট ভাগাভাগির সুয়োগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হবেন কিনা সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ফটো ফিনিশ   দেখার অপেক্ষায় দিন গুনছেন এই দুই কেন্দ্রের ভোটাররা ।   এবার ভোটে  মুর্শিদাবাদ আসনে আবু তাহের খানকে হারাতে  কংগ্রেস সিপিএম জোটপার্টি  সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে Md Salim  প্রার্থী  করে অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ বিধানসভার বিধায়ক গৌরী শঙ্কর ঘোষকে  Gouri Shankar Ghosh বিজেপি  এবার  প্রার্থী করে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে  দিয়েছেন একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।  গোদের উপর বিষফোঁড়ার  মতো অধিকাংশ পরিয়ায়ী নির্মাণ শ্রমিক  তাদের কাজের জায়গায়  ভিন রাজ্যে ফিরে  গিয়েছেন।

পরিযায়ী শ্রমিকদের  কথায়,  এখানে কাজ নেই, উপরন্তু ভোটের  সময় গন্ডগোলে জড়িয়ে পরে জান প্রাণ নিয়ে টানাটানি ।  ঈদের আগে অনেকেই ফিরেছিলেন। এখন এলে থেকে যেতে হবে ইদুজ্জোহা অবধি । বন্ধ হবে রোজগার । তাই ভিনরাজ্যেই ভালো।

সেই ব্যাপার  টের পেয়েই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ও দুটি কেন্দ্রে চার চারটি সভা করে  শ্রমিকদের ফিরে  এসে ভোট  দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।  গত ২০১৯ ভোটের কংগ্রেস ও সিপিএম আলাদা  ভাবে লড়েছিল, কিন্তু  এবার  তারা  একজোট হয়ে লড়ছে, তাই দুইদলের প্রাপ্ত  ভোট য়োগ করলে  প্রায়  ৪৫ হাজারের  সামান্য কিছু ভোটে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে  সব সময় পুরনো  অংক মেলেনা।   যদিও বিদায়ী সাংসদ আবু তাহের খান এসব পাত্তা  না দিয়ে  বিপুল ভোটে জিতবেন  বলে দাবি করেছেন, অন্যদিকে  মহম্মদ সেলিম  কিন্তু  হত্যে দিয়ে  মুর্শিদাবাদ লোকসভা ভোটের  অনেক  আগে থেকেই চষতে শুরু  করেছেন । সেলিমে   দাবি  কংগ্রেস  সিপিএম ও সাধারণ মানুষ  একজোট  হয়ে সভাগুলিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন । তবে ভোটের বাক্সে তার  প্রতিফলন কতটা পরে সেটাই এখন দেখার। ইতিমধ্যেই নির্বাচন  কমিশন বিরোধীদের অভিযোগ পেয়ে  ভগবানগোলার রাণিতলা থানার ওসি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে শেষ মুহূর্তে সরিয়ে দিয়েছে। এদিকে  ডোমকল,রানীনগর সহ বিভিন্ন  এলাকায় প্রচুর বোমা  উদ্ধার  করা হয়েছে।  তবে এবার আর ভোটে অশান্তি ছড়াতে না পারে তার জন্য কড়া হাতে ব্যবস্থা নিয়েছে, ইতিমধ্যে দুই কেন্দ্র মিলে  ১১৪ কোম্পানি  কেন্দ্রীয় বাহিনী  মোতায়েন  করা হয়েছে।

এবারে জঙ্গীপুর আসনের কথায় আসা  যাক । এই কেন্দ্রে বিড়ি  শ্রমিকদের  হাতেই  থাকে  ভোটে জেতার চাবিকাঠি।  প্রণব মুখোপাধ্যায়  ও অধিকাংশ বিড়ি শ্রমিকদের ভোটেই পরপর  দুবার জিতেছিলেন। কারণ বিড়ি কোম্পানির মালিকরা তাকে সমর্থন করেছিলেন।  তৃণমুল কংগ্রেস এই কেন্দ্রে  ক্ষমতার উৎস ভোট  বৈতরনী পার হতে   জনপ্রিয় বিড়ি  কোম্পানির মালিক  খলিলুর রহমানকে  প্রার্থী  করে। এর আগেও পরে  অবশ্য অন্যান্য  বিড়ি কোম্পানির মালিকগণ য়েমন ইমানি বিশ্বাস,জাকির  হোসেন, বায়রন বিশ্বাসরা বিধায়ক হয়েছেন। এবার  ভোটে কিন্তু  খলিলুর  রহমানকে শক্ত লড়াইয়ের মুখে   পড়তে হয়েছে।  অপর দুই  বিড়ি কোম্পানির  মালিক  শাহাজাহান বিশ্বাস  আই এসএফ ও বিড়ি মালিল বাবর বিশ্বাসের আত্মীয়  আসাদুল  বিশ্বাস নির্দল প্রার্থী  হিসেবে  তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন।  ফলে একচেটিয়া  বিড়ি মহল্লার ভোট  এবার ভাগ হবে বলে  মনে করা হচ্ছে। কারণ  অপর দুই প্রার্থী  আবার দুই বিধায়কের দাদা ও ভাই।

প্রণব মুখোপাধ্যায় এর ছেড়ে  যাওয়া  জঙ্গীপুর  আসনে প্রয়াত আব্দুস  সাত্তারের  নাতি  মুর্তজা হোসেন  বকুলকে প্রার্থী  করেছে কংগ্রেস।

বিড়ি শ্রমিকদের  মধ্যে  সিটু ও আইএন টি ইউসি প্রভাবিত  বিড়ি শ্রমিকদের এককাট্টা ভোট  ব্যালট বাক্সে আনতে মরিয়া   অধীর চৌধুরী চমক দেখিয়ে দাবি করেছেন জঙ্গীপুর  এবার ফের কংগ্রেস দখল  করবেই।  অপর দিকে  সংখ্যালঘু অধ্যুষিত  জঙ্গীপুরে বিজেপি  ডাকাবুকো নেতা ধনঞ্জয় ঘোষকে প্রার্থী  করে বিড়ি শ্রমিকদের ভোটে থাবা বসাতে চান।  গত ২০১৯ নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী  মাফুজা বেগম ৩ লক্ষ১৭ হাজার ০৫৭ ভোট পেয়ে  কংগ্রেসের প্রণব পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে তৃতীয়  স্থানে  ঠেলে  দ্বিতীয় স্থানে  উঠে  এসে চমকে দিয়েছিলেন। এবারের বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষের দাবি  সেই  ভোটের থেকেও বেশি ভোট  পেয়ে  জিতবেন তিনি। অন্যদিকে  ২০১৯ সালে  কংগ্রেস সিপিএমের মিলিত ভোট  ৩ লাখ  ৫১ হাজার ৩৩৭। এবার  তারা  অভূতপূর্ব  সাড়া পাচ্ছে , তারাই  জিতবেন।

একদিকে গ্রীষ্মের দাবদাহ,পরিয়ায়ী শ্রমিকদের  বিরাট  সংখ্যায় অনুপস্থিতির আশংকা, বিড়ি  শ্রমিকদের ভোট ভাগাভাগি  সব মিলিয়ে  ভোটদানের পরিমান য়েখানে প্রায়  ৮৫% থেকে  অনেক  কমে গেলেও শেষ  হাসি  তিনিই হাসবেন দাবি  খলিলুর রহমানের। সব মিলিয়ে  জঙ্গীপুরেও হাড্ডা হাড্ডি লড়াই  এর সম্ভাবনা, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে  যুযুধান  দুই প্রার্থী  মহম্মদ সেলিম  ও আবু তাহের খান  পরস্পরকে রাস্তা  ছেড়ে দিয়ে করমর্দন করে অভূতপূর্ব  নজির সৃষ্টি  করেছিলেন।  সেই  নজির কি সব দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে  পড়বে ?    তবে সব কিছু  নির্ভর  করছে আদতে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ এর উপর। আর এটাই নির্বাচন কমিশনের কাছে  সেটাই এখন  মস্ত  চ্যালেঞ্জ।

 

প্রাণময় ব্রহ্মচারী সাংবাদিক। মতামত ব্যক্তিগত।