প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বিশ্বভারতীর পড়ুয়া আমিনার পা জাতীয় প্যারা অ্যথলেটিক্সে

নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ ন’মাস বয়সে আচমকা লন্ঠনের আগুন লেগে ঝলসে যায় দু’হাতের আঙুল। কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায় আঙুলের। পাশাপাশি পুড়ে যায় মুখের একাংশও। যে বয়সে বাচ্চারা বাবা-মা, বড়দের আঙুল ধরে ঘোরে সে বয়সেই তার আঙুল ঝলসে যায় বর্ধমানের মানকর এলাকার বাসিন্দা আমিনা খাতুনের। একে মেয়ে তারওপর বিশেষভাবে সক্ষম হয়ে যাওয়া আমিনাকে নিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল বাবা-মায়ের। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের মেয়ে আমিনাকে বড় হতে হয়েছে সরকারি হোমে। সেই হোমই হয়ে উঠেছিল তার ঘরবাড়ি। সময় গিয়েছে, প্রলেপ পড়েছে ব্যথায় কিন্তু ক্ষত মোছে নি।

হাজার প্রতিকুলতার সঙ্গে যুঝে বিশেষভাবে সক্ষম সেই আমিনা নিজেকে তৈরি করেছেন।
সমস্ত দুশ্চিন্তার কালো মেঘ সরিয়ে প্যারা অলিম্পিক কমিটি অফ ইন্ডিয়া আয়োজিত ২২তম জাতীয় প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহন করেছেন। লক্ষ্য পদক ছিনিয়ে আনা।

তবে এই পথ একদিনে তৈরি হয়নি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরশিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আমিনা ছোট থেকেই খেলাধুলার পাশাপাশি গান-বাজনা করতেও ভালোবাসেন। স্কুলে খো-খো খেলা দিয়ে শুরু। তারপর বিভিন্ন রকমের খেলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এভাবেই চলছিল। হঠাৎ সেই অবস্থায় ঢেউ তুলল কলকাতায় বেঙ্গল প্যারা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়শনের উদ্যোগে রাজ্যস্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়।

ওই প্রতিযোগিতায় সব ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়েবিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বিভাগে ১০০ মিটার দৌড় ও লং জাম্পে প্রথম স্থান অধিকার করে সোনার পদক জেতেন আমিনা। তারপরেই সুযোগ পাওয়া জাতীয় প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে। গোয়ায় প্যারা অলিম্পিক কমিটি অফ ইন্ডিয়া পরিচালিত এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। চলবে ৯ই জানুয়ারি থেকে ১৩ই জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই প্রতিযোগিতায় বাংলা থেকে সুযোগ পাওয়া মোট আট জনের মধ্যে একজন আমিনা। এদিন তিনি জানান, “খেলাধুলা করতে খুব ভালোবাসি। এত বড় এক জায়গাতে এসে পৌঁছাতে পারব ভাবতেই পারিনি।” এদিন অকপটে স্বীকার করেন, ” আমি জানতাম না, যে আমাদের মতন বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য এইরকম খেলার সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু জানার পর আর থেমে থাকিনি।”

আমিনার সাফল্যে আপ্লুত বিশ্বভারতীর শারীরশিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ডঃ গোপাল চন্দ্র সাহা। তিনি জানান, “আমাদের বিভাগের সবচেয়ে বাধ্য ছাত্রী আমিনা। পড়াশোনায় যেমন ভালো, পাশাপাশি খেলাধুলাতেও তুখড়। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও আমিনা সাধারণ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। আর আমি আমিনাকে সমস্ত বাচ্চাদের কাছে উদাহারণ হিসেবে তুলে ধরি। তাঁর এই সাফল্যে আমরা খুব খুশি।”