উৎসবের মরশুমেও মুখভার বিড়ি শ্রমিকদের!

দেবনীল সরকারঃ দোরগোরায় পুজো। রাত পোহালেই পঞ্চমী। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে তরজোর। পুজোর ক’দিন রাত জাগবে শহর থেকে গ্রাম। কিন্তু কোথাও কোথাও ঝাড়বাতির নীচেও রাতপাখির মতন জেগে থাকবে আঁধার।
সবার পুজো সমান হয়না। এত নিয়ন আলোর মাঝেও অন্ধকার মাথাচাড়া দেয়। বাজারে লাইন দিয়ে জামাকাপড় কেনার তোরজোর কিন্তু নিজের কথা ভুলে বাড়ির ছোটদের একটা নতুন জামাকাপড় দেবার জন্য অনর্গল পরিশ্রম করে চলেছেন। কারা ওরা? ওরা কাজ করে। কাজ করে বলেই টাকা পায়। কিন্তু যতসামান্য সেই টাকা। উৎসবের আগে নতুন সাজে সেজে ওঠে সকলে। কিন্তু দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দুর্দশার ছবি পাল্টাচ্ছেই না মুর্শিদাবাদের বিড়ি শ্রমিকদের।

উৎসবের প্রাক্কালে এ যেন এক অন্য ছবি। মাথার ওপর দিনযাপনের হাজার চিন্তা নিয়ে সকাল থেকে ধামায় পাতা নিয়ে, দালানে বসে বিড়ি বেঁধে চলেছেন সুতির মহিশাইল ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের, বামুহা গ্রামের মায়েরা। গ্রামে রয়েছে ৮০০ পরিবার তাঁরা সকলেই বিড়ি শ্রমিক। তাঁরা সকলেই এক একজন দুর্গা। দশ হাত নেই, তবে খাটুনিরও কমতি নেই। বিড়ি বেঁধেই সংসার চালান এই মায়েরা। মা দুর্গার জীবন যুদ্ধের থেকে কিছু কম নয় এদের জীবনযুদ্ধও। বিড়ি বেঁধেই দিন গুজরান করেন এই এলাকার। এটাই তাঁদের পেশা। প্রতি ১০০০ বিড়ি বেঁধে মজুরি পান মাত্র ১৭৮ টাকা। এই টাকাতেই চলে সংসার। চলে ছেয়ে মেয়েদের পড়াশোনা। সখ আহ্লাদ বলি দিয়েছেন অনেককাল। তবে, পুজোর আগে বাড়ির ছোটদের একটা জামা কাপড় তো দিতেই হয়! সরকার যদিও এই মজুরি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল ভোটের আগে। তবে ভোট আসে ভোট যায়, পাল্টায় না বিড়ি শ্রমিকদের দুর্দশার ছবিটা।

বিড়ি শ্রমিক সেফালি পাল বলেন, আজ প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি বিড়ি বাঁধার কাজ করছেন। তবে এই দুর্দশার ছবি আজকের না। মা তাঁদের মনে আছেন। মা জানেন তাঁদের কষ্ট। মায়ের তো অনেক কাজ। একা তাঁদের কথা ভাবলে চলে! -একে মুখ ভার তবু তার মধ্যেও নির্বিকার। ওভারটাইম কাজ করে নিজের ছোট ছেলের জন্য কিনেছেন এক সেট জামা। আর এবছরই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তাই মেয়ে জামাইকেও কিছু দিতে হবে। তাই ওদের জন্যেও কিনেছেন এক সেট করে জামা কাপড়। উৎসবের আনন্দ সবার। কিন্তু সেই আনন্দের খেসারতের পিছনে যে কত সংগ্রাম আছে, তার আঁচ পায় কেবল জীবনযুদ্ধের সংগ্রামীরাই। প্রতি বছেরর মতো এবারও পুজো অনেক কিছু শেখাবে। হিন্দু শাস্ত্র বলে, সব মায়েরাই দুর্গা। আমাদের নজর থাকবে এই বিড়ি মহল্লার দুর্গাদের প্রতি। কবে পাল্টাবে বিড়ি শ্রমিকদের যন্ত্রণার ছবি, সেদিকেই থাকুক দৃষ্টি।