‘ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু মুসলমানদের অবস্থা বদলায় না’ সরব মাদ্রাসা (Madrasah) শিক্ষকরা

সম্মেলনে উপস্থিত  বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, "পিছিয়ে কে আছে না মুসলমান। আমরা জেল খানায় বাড়ছি। রাজনৈতিক হত্যাকান্ডে কারা মরে? মুসলনমানরা মরে। ইতিহাসে তাদের নাম নেই।"

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুরঃ  বেঙ্গল মাদ্রাসা ফোরামের  (Bengal Madrasah Forum) প্রথম মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলনে মাদ্রাসা (Madrasah) শিক্ষকরা দাবি করলেন, ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু মুসলমানদের সমাজে কোনও বদল হয় না।

রাজ্যের ৬১৪টি মাদ্রাসা স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করতে তৈরি হয়েছিল মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। কিন্তু ২০১৪ সালে  প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ও পরে ২০১৫ সালে ডিভিসন বেঞ্চ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে অবৈধ ঘোষণা করে। সেই কমিশনকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছিল বেঙ্গল মাদ্রাসা ফোরাম। এই ফোরাম উদ্যোগ নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেখানে অবশ্য মাদ্রাসা কমিশনকে বৈধতা দেয় শীর্ষ আদালত। তারপর থেকেই আরও বেশি সংগঠিত হয়েছে ফোরাম।

রবিবার সেই ফোরামের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রথম শিক্ষা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হল বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। সেখানে সম্মেলনে জাতীর ভবিষ্যৎ পন্থা নির্ণয়ে এবং দেশে সম্প্রীতি ও সংহতি রক্ষায় শিক্ষক সমাজের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করেন মাদ্রাসা শিক্ষক সহ রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। তাঁরা দাবি করেন, ” ধর্ম যার যার, দেশ সবার” সম্প্রীতির বাংলায় শিক্ষা সবার।” সম্মেলনে শিক্ষা থেকে রাজনীতি সব বিষয়েই ছুঁয়ে যান তাঁরা। তাঁদের সকলের বক্তব্যেই ছিল শিক্ষার পাশাপাশি মুসলমান সমাজের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর কথা।

আরও পড়ুনঃ মাদ্রাসার প্রাথমিক টেটে অনুপস্থিত অর্ধেকেরও বেশি

সম্মেলনে উপস্থিত  বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পিছিয়ে কে আছে না মুসলমান। আমরা জেল খানায় বাড়ছি। রাজনৈতিক হত্যাকান্ডে কারা মরে? মুসলনমানরা মরে। ইতিহাসে তাদের নাম নেই।” কটাক্ষ করে বলেন, ” স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও যারা মাটি কেটে চাষ করে তারা পায় না খেতে ভাত। যারা পাথর কেটে পুকুর বানায় তারা পায় না খেতে মাছ। রাতের পর রাত জেগে যারা  বেনারসি বোনে, তারা ছেঁড়া কাপড় পরে। আর কতকাল এমনি করে মার খাবে দূর্বল।”  এরপরেই তিনি সরাসরি রাজনীতির কারবারিদের নাম উল্লেখ না করে বলেন “তারা বলে তোমরা মুসলমান, তোমাকে পাঁচশো টাকা দেব, হাজার টাকা দেব। তুমি কিন্তু আমাকে ভোটটা দিয়ে যাবে বছরের পর বছর।” তিনি দাবি করেন, ” রাজনীতিটা আজ বদনীতি  হয়ে পচে গিয়েছে।”

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সিরাজুল বলেন,” ইসলামের নাম করে যে বদনাম উঠেছে সেই বদনামকে ঘোচাতে হবে। নিচুতলা থেকে শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিজের পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের ভারতকে সুন্দর ভারতবর্ষে রুপান্তরিত করতে হবে।” মাদ্রাসা শিক্ষকদের মধ্যে ত্যাগ কমেছে বলেও দাবি করেন এই প্রবীণ শিক্ষক। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। তিনি বলেন, ” শুধু সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। নিজেদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।”

মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়  নামে তৈরি হয়েছে। মুর্শিদাবাদ বলেই এখানকার মানুষকে বোঝাতে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি বলেও এদিন সরব ছিলেন  আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যার অধ্যাপক মুকুলেসুর রহমান। তিনি বলেন, “মানুষ চাইছে বলে সরকার তৈরি করে দিচ্ছে।” আরও বলেন, ” এই জেলাতেই তৈরি হতে পারত রাজমিস্ত্রিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য হাব। কিন্তু তা তৈরি হয় না।” একইভাবে তিনি বলেন, ” সরকার কখনও একজন ভাল নেতাকে সংসদে পাঠায় নি। মুর্শিদাবাদ ব্যবহার হয়েছে রাজনীতিতে।” মুর্শিদাবাদ জেলায় মাদ্রাসা স্কুলগুলিতে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম, কমছে পড়ুয়া। এর জন্য সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকেই দায়ি করছেন এই অধ্যাপক। তবে তিনি আশাবাদী। বলেন, “এই পরিস্থিতি বদলাবে।”

তবে দুই শিক্ষকই দাবি করেন মুর্শিদাবাদে শিক্ষার হার আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষাকে আরও নীচুস্তরে নিয়ে না গেলে ড্রপ আউট ছাত্র পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে নাম লেখাবে ভিন রাজ্যে, বয়সের আগে বিয়ে হয়ে যাবে ছাত্রীর। সেই দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদের। সচেতন করতে হবে সমাজকে। সিরাজুল বলেন, ” ক্রমাগত মূল্যবোধ কমছে। তার বিকাশ ঘটাতে হবে শিক্ষার সঙ্গে পেশার সঙ্গে। তবেই পরিস্থিতি বদলাবে।”

এদিন ফোরামের পক্ষ থেকে ১৮ দফা বিভিন্ন দাবি দাওয়ার মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী নিয়োগ সহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় নিয়োগ হওয়া ‘ভুতুড়ে শিক্ষক’দের নামের তালিকা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ছিল। তেমনি রাজ্যের অন্তত ৫০টি মাদ্রাসাকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নিত করবার দাবিও তোলেন সদস্যরা।