জেলার দুই শতাধিক স্কুলে তিরিশের নিচে পড়ুয়া, আঁধারে প্রাথমিক শিক্ষা

মধ্যবঙ্গ নিউজ,বহরমপুরঃ মুর্শিদাবাদ জেলার ২২৭টি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ৩০ জনের কম। কোথাও একজন, কোথাও তাও নেই। রাজ্যের শিক্ষা দফতর রাজ্য জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে কোথায় কত ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী আছেন তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে সদ্য। সেই তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, রাজ্যের আট হাজারের বেশি স্কুলে তিরিশের নিচে পড়ুয়া। মুর্শিদাবাদে সেই সংখ্যাটা ২২৭। তালিকা অনুযায়ী, এই জেলার সদর শহরে এমন স্কুলের সংখ্যা ১২টি। তারমধ্যে সদর পশ্চিম চক্রের যতীন্দ্রনাথ সিনহা প্রাইমারি স্কুলে ২০২৩ সালে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয় নি। ২০২১, ২০২২ সালে এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২ ও ১। এই পড়ুয়াদের পড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ে নিয়মিত দু’জন শিক্ষক আছেন। সদর দক্ষিণের শ্রীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি বছর ৭ জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে। তাঁদের পড়ানোর জন্য সেখানে নিয়মিত তিন জন শিক্ষক আছেন।

এছাড়া জেলার ২৬টি ব্লকের মধ্যে প্রায় ১৭টি ব্লকে কম বেশি এইরকম স্কুলের খোঁজ পেয়েছে শিক্ষা দফতর। ফরাক্কা চক্রের ৬৬ সুরনা জানকীনাথ স্মৃতি প্রাথমিক স্কুলে দু’জন শিক্ষক থাকলেও সেখানে কোনও পড়ুয়া নেই। তালিকা অনুযায়ী পড়ুয়া নেই এমন স্কুলের সংখ্যা জেলায় ২৩টি। তিরিশের কম পড়ুয়া আছে সবথেকে বেশি বড়ঞা ও বহরমপুর ব্লকের একাধিক স্কুলে। বড়ঞার ২৬টি স্কুলে আর বহরমপুরের ২৯টি স্কুলে তিরিশের কম পড়ুয়া আছে। আবার বড়ঞার গ্রামশালিকা গার্লস জুনিয়ার হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ জন। কিন্তু শিক্ষক সেখানে শূন্য। নিয়মিত, অনিয়মিত কোন শিক্ষকই নেই ওই স্কুলে। ওই ব্লকেরই মোনাইকান্দ্র জুনিয়ার গার্লস হাইস্কুলের তিনজন পড়ুয়াকে পড়ানোর জন্য আছেন একজন শিক্ষাকর্মী। ওই ব্লকের মানিকপুর জুনিয়র হাইস্কুলে ২০২১ ও ২০২২ সালে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৪১ ও ১২৯ জন। চলতি বছর সেখানে পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে মাত্র তিন জন। ওই স্কুলে শিক্ষক আছেন এক জন। বেলডাঙার দলুয়া গার্লস জুনিয়র হাইস্কুলে কোনও পড়ুয়া নেই। অথচ শিক্ষক আছেন দু’জন। বেলডাঙা দু‘নম্বর ব্লকের রামপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল ফর গার্লসে কোনও পড়ুয়াও নেই, শিক্ষকও নেই। আছেন একজন শিক্ষাকর্মী। ভরতপুরের গোড্ডা গোপী কিশোরী গার্লস জুনিয়র হাইস্কুলে ১১ জন পড়ুয়ার জন্য কোনও শিক্ষক নেই। সেখানেও শিক্ষাকর্মীই পড়ান, যারা স্কুলে আসে তাদের। ডোমকল শ্রীকৃষ্ণপুর জুনিয়র হাইস্কুলে কোনও পড়ুয়া চলতি বছর ভর্তি হয় নি। কিন্তু সেখানে একজন ডেপুটি শিক্ষক আছেন। সেখানে শিক্ষাকর্মী আছেন একজন।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষকহীন, পড়ুয়াহীন এই সমস্ত স্কুলের ভবিষ্যত নিয়ে। কেন পড়ুয়া কমছে এই সব স্কুলে? ঘাটতি কোথায়? সে সব নিয়ে কী ভাবছে জেলা প্রশাসন? জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক নৃপেন সিনহা বলেন, “ তা নিয়ে সরকারি কোনও সিদ্ধান্ত এখনও আসে নি।” জেলায় মোট তিন হাজার ১৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসএসকে, এমএসকে আছে আরও এক হাজার ৫১০টি। তারমধ্যে অকেজো হয়ে আছে বহু এসএসকে, এমএসকেও। যে কোনওদিন অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই স্কুলগুলি, দাবি স্কুল শিক্ষকদের।

নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সহ সম্পাদক সুশোভন খান বলেন, “ উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সরাসরি সেই বিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়ার ফরমান দিয়েছিল পরিবর্তনের সরকার। এর ফলে শহরাঞ্চলের উচ্চ বিদ্যালয় যুক্ত নেই এইরকম বহু প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা কমতে শুরু করে। যার ফলে আজকে জেলার এতগুলি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে।” যদি কোনও স্কুল বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে সেই স্কুলের পরিকাঠামো ব্যবহার করে পিপিপি মডেলে ওই স্কুলগুলি চলতে পারে বলে জানান ওই শিক্ষক নেতা।

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অরুণ বিকাশ দাম বলেন, “ দীর্ঘদিন ধরে এই স্কুলগুলিতে পড়ুয়া বাড়ছে না। সেটা সরকারও লক্ষ করেছে। এরপর সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের মনে হয় একটি স্কুল অন্য একটি স্কুলের সঙ্গে ভবিষ্যতে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। আর যেখানে প্রয়োজন সেখানে সেই সব স্কুলের শিক্ষকদের বদলি করা হতে পারে।”