পাট্টা, পুনর্বাসন মেলেনি, ধ্বংসস্তূপই ঠিকানা মইনুদ্দিন শুকতারাদের

মধ্যবঙ্গ নিউজ ডেস্কঃ সকালে ঘুম ভাঙতে চোখে এসে পড়ছে ফুটো ত্রিপল থেকে রোদের ছটা। নদীতে তলিয়ে গেছে বাড়ি। এখন সব হারিয়ে পরের বাড়ির ধ্বংসাবশেষই ঠিকানা পনেরোটি পরিবারের। কোনও রকমে সেখানেই দিন গুজরান। খোলা জায়গায় মাটির উনুনে ফুটছে ভাত। নদীর পাশে খোলা জায়গায় চলছে স্নান থেকে শুরু করে নিত্য দিনের যা যা কাজ। আর শীত পড়তেই সেই কষ্ট বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এই কষ্ট সইতে সইতেই জীবন কেটে যাবে, কোনও হুঁস নেই সরকারের, অভিযোগ সামসেরগঞ্জের নদীপাড়ের বাসিন্দাদের।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরচাচন্ড গ্রামের এক বাসিন্দা মইনুদ্দিন মোমিন। তিনি জানান, ” সরকার থেকে শুধু ত্রিপল সাহায্য দিয়েছে। ত্রিপল কি থাকার জায়গা? এভাবে বসবাস করা যায়? সরকারকে এগুলো দেখা দরকার। আমাদের রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছে না। আমরা তো ভারতের নাগরিক। এটা মানতে হবে। সরকার তো এসব নিয়ে কিছুই মাথা নাড়ছ না। শুধু ত্রিপল না আমাদের পুনর্বাসন চাই। শীতের সময় ঠাণ্ডাতে এই ত্রিপলের ছাউনিতে থাকা যায় না। সরকার থেকে নাম লিখে নিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও কিছু পাওয়া যায় না। নিজস্ব যে সম্পত্তি ছিল, সেগুলো সব চলে গেছে। এখন এখানেই থাকা ছাড়া আর উপায় কী? এইসব পরের জায়গা, যেগুলো ফাঁকা পরে আছে, সেখানে আমরা বাস করছি। নিজেদের কোনও রকমে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কঠিন ভয়ে আছি।”

সামসেরগঞ্জের উত্তর চাচন্ড গ্রাম। গত ২৬ শে অক্টোবর ভোর রাতে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকার ১৫ টি পরিবার। নিজেদের বাসবাড়ি তলিয়ে গিয়েছে নদীর জলে। সব হারিয়ে নদীপারেই ধ্বংসস্তূপের ওপরেই ত্রিপলের অস্থায়ী ঠিকানা, মইনুদ্দিন শুকতারাদের পরিবারের। শুধু ত্রিপলে কী হবে? সরকারি লোক এসে নাম ঠিকানা নিয়ে গেছে, কিন্তু ওই নাম নথি নেওয়ায় সার, হয়নি কোনও কাজের কাজ। তবুও আশা করা ছাড়া আর কী ই বা করতে পারেন নদী পারের শুকতারা বিবি। ভাঙনের পড়ে কেটে গেছে এক মাসের ও বেশি সময় তবুও, মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য, কোনও রকম পুনর্বাসন বা জমির পাট্টা। জীবন তো চলবেই, চালিয়ে নিতে হবে কোনও মতে।

ডিসেম্বর পড়তেই জেলা জুড়ে শীতের আমেজ। শীতের হিমেল হাওয়া অনেকের কাছে মনোরম মনে হলেও, মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের নদীপাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এ যেন এক অভিশাপ। কিন্তু এই অভিশাপ আদৌ কাটবে?

গত ৫ই মে ঝটিকা সফরে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, ঘুরে দেখেন সামসেরগঞ্জ সহ জেলার ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলি। ভাঙন প্রতিরোধে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন ১০০ কোটি টাকা। সাথে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেন জমি ও পাট্টা দেবার প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি থেকে গিয়েছে খাতা কলমেই। মেলেনি কিছুই। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরে কেটে গেছে সাতমাস। নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল, বয়ে গেছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। তবে প্রশ্ন ওরা সরে যাবে কোথায়? কে দেবে ওদের জায়গা? কোথায় পাট্টা আর কোথায় জমি? সামাসেরগঞ্জের উত্তরচাচন্ড গ্রামের এই ১৫টি সর্বহারা পরিবারের কথা শুনবে কারা? উত্তর দেবে সময়।