মামলায় শুধু আইন দেখালে জনবিরোধী কাজ হবে, বহরমপুরে বললেন জাস্টিস গাঙ্গুলি

ঋত্বিক দেবনাথ, বহরমপুরঃ বিচার ব্যবস্থাকে মানুষের কাছে আসতে হবে। আইভরি টাওয়ারে বসে থাকলে চলবে না। বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে বিচার চলবে না। সাক্ষী না থাকলে প্রমাণ হবে না আপনি খুন করেছেন, না করেন নি। ঘুষ নিয়েছেন না নেননি। এই ধরনের অবস্থানগত প্রমাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়।  বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে শনিবার বিকেলে এক সেমিনারে ভারতের বিচারব্যবস্থা নিয়ে আক্ষেপ ঝরে পরে বিচারপতির গলায়। তিনি বলেন, “এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে”। তিনি চান, ভারতের বিচার ব্যবস্থা আইভরি টাওয়ারে বসে না থেকে মানুষের কাছে নেমে আসুক।
বহরমপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শহিদ ক্ষুদিরাম পাঠাগারের একটি ক্যান্সার প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিটের উদ্বোধন করতে বহরমপুরে এসেছিলেন তিনি। সেই উপলক্ষেই রবীন্দ্রসদনে সেমিনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই তিনি বলেন, “সমাজ ব্যস্তবতাকে মাথায় না রেখে যদি কোনো মামলার বিচার করবার সময় আইনের অনুসিদ্ধান্তকে প্রয়োগ করি তাহলে সেই কাজ জনবিরোধী হতে বাধ্য। মানুষের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য।”

রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়িয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শাসক দলের একাধিক নেতা। তাঁর এজলাসেই চলছে শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক মামলা। সম্প্রতি ইডি সিবিআইকে দীর্ঘদিন ধরে না চালিয়ে সেই দুর্নীতি মামলার জাল গুটিয়ে আনতে সময় বেঁধে দিয়েছে আদালত। অনেক সময় সাক্ষী বা উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে মামলার রায় বদলে যাওয়ার সাক্ষী থেকেছে আদালত। এদিন সেদিকেই ইঙ্গিত করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ” শত দুর্নীতি ধরা পড়ার পরেও সাক্ষী ছাড়া কোনও দুর্নীতি প্রমাণ হবে না। কারণ, আবার একটি সাক্ষী রেখে দুর্নীতি করে প্রমাণ করতে হবে দুর্নীতি হয়েছে। সাক্ষী না থাকলে দুর্নীতি হবে না। সারকামস্টেনশিয়াল এভিডেন্সের প্রয়োজন হবে না।” যা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

তাঁর অবসর জীবনে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বর্তমান ধারণা বদলাতে চান বলেও এদিন বহরমপুরবাসীকে জানান। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমাজে অনেকেই হুমকির সময় আদালত দেখিয়ে দেওয়ার কথা বলেন, কেউ বাড়িতে উকিল ঢুকিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। সেই  উদাহরণ টেনে  বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও এদিন তাঁর গলায় আক্ষেপ ঝরে পরে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আদালতকে এইভাবে না দেখে একে লড়াইয়ের ক্ষেত্র হিসেবে দেখতে চাই। তিনি আরও বলেন, “যেখানে বিচার হবে, ন্যায় অন্যায়ের বিচার হবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা পাবে। শুধুই প্রমাণ এবং অপ্রমাণের প্রশ্ন উঠবে না যেখানে সত্য মিথ্যার দিকে বিচারপতিদের দৃষ্টি থাকবে তেমন একটি ব্যবস্থার জন্য সচেষ্ট হব।”