জলঙ্গীতে সিপিএমের দেওয়াল লিখন কী প্রেসার পলিটিক্স?

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ ভোটের ফলাফলে ললাট লিখন যাইহোক না কেন দেওয়াল লিখনে মুর্শিদাবাদ কেন সম্ভবত সারা বাংলায় ২০২৪ এর লোকসভা ভোটের  প্রথম দেওয়াল লিখন শুরু করল সিপিএমই। দেওয়ালে “রাজ্যে তৃণমূলের দুর্নীতি, কেন্দ্রে বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা রুখতে সিপিআইএম প্রার্থীকে ভোট দিন” লিখে ভোট চাইতে নেমেছেন জলঙ্গী এরিয়া কমিটির নেতারা। সে কথা প্রচার করতে সংবাদমাধ্যমের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবি দিয়েও খানিক পরে অবশ্য তা মুছে দেন তাঁরা। তবে জেলা নেতৃত্বের নির্দেশেই যে দেওয়াল লেখালিখি হয়েছে তা  জলঙ্গী এরিয়া কমিটি সূত্রে জানা যায়।

সিপিএম কেন্দ্রের এনডিএ জোটের বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অংশীদার। সেই জোট ধাক্কা খেয়েছে বাংলায়। সেখানে কংগ্রেসের হাত ধরবে কাস্তে হাতুড়ি তারা। তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। আবার তৃণমূলের সঙ্গে যে জোট হচ্ছেই না বাংলায় সে কথাও কংগ্রেসের তাবড় নেতারা স্পষ্ট ঘোষণা করেননি। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে বার্তা দিতেই কী সিপিএমের দেওয়াল লিখন?  রাজনৈতিক মহলে উঠছে প্রশ্ন। সিপিএমের  জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ” নির্বাচনের প্রচারে দেওয়াল দখল করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দেওয়ালে কে প্রার্থী কী প্রার্থী সে সব লিখতে বলা হয়নি। পার্টির অতি উৎসাহীরা এই কাজ করেছে। ”

সিপিএমের দোসর হওয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের মনোমালিন্য হয়েছে বলে প্রকাশ্যে দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  কংগ্রেসকে দুটি লোকসভা আসন ছাড়তে চেয়েছিল, কংগ্রেস তা শোনেনি বলেই বঙ্গে  দানা বাঁধে নি ‘ইন্ডিয়া’। এমন দাবিও মুর্শিদাবাদ সফরে এসে করেছিলেন মমতা। সরাসরি সিপিএমকে কংগ্রেসের দালাল বলেও চিহ্নিত করেছেন তিনি। আবার মুর্শিদাবাদে রাহুল গান্ধীর ‘ন্যয় যাত্রা’য় সঙ্গী হয়েছেন মহম্মদ সেলিম, শতরূপ ঘোষ, সূজন চক্রবর্তীরা। কংগ্রেসের ন্যয় দাবির পক্ষে তাঁরা আছেন বলেই তাঁদের ন্যায় যাত্রাকে সংহতি জানাতে হাজির হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

 

এই অবস্থায় লোকসভা নির্বাচনে সরকারিভাবে না কংগ্রেস না সিপিএম কেউই বঙ্গে তাঁদের সমীকরণ কী হবে তা জানায় নি। আসন বন্টন তো অনেক দূরের কথা। এই অবস্থায় জলঙ্গী ব্লকে সিপিএমের দেওয়াল লিখন কীসের কৌশল। উঠছে সেই প্রশ্নও। কংগ্রেসও এক্ষেত্রে রক্ষণাত্মক। জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ” আসন বন্টন নিয়ে কোনও কথাই হয়নি। এখন তার সময়ও নয়। এগুলো কোনও উঁচু তলার কাজ নয়। হয়ত নিচু তলার কর্মীরা অতি উৎসাহে দেওয়ালে লেখালিখি করেছে।”

মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনটি লোকসভা আসন। বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর। বছর পাঁচেক আগের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর বাদ দিয়ে বাকি দুটি আসন জিতেছিল তৃণমূল। তার আগে ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সিপিএমের দখলে ছিল মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনটি। মাঝখানে অবশ্য পাঁচ বছর কংগ্রেসের প্রতীকে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন আব্দুল মান্নান। বর্তমানে তৃণমূলের আবু তাহের খান ওই এলাকার সাংসদ।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, মুর্শিদাবাদের তিন আসনের মধ্যে প্রথম থেকেই মুর্শিদাবাদ আসনটি জোট সঙ্গী কংগ্রেসের কাছে আব্দার করবে সিপিএম তা জানাতেই প্রকাশ্যে এই দেওয়াল লিখন। তাঁদের মত, আগাম এই এলাকায় নিজের দলের প্রচার করে মানুষের মন যাচাই করতে শুরু করেছেন তাঁরা। এই জলঙ্গীতে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের ঘরের ঝগড়ার কারণেই মানুষের মত পক্ষে টানতে পারেনি সিপিএম । সেবার চারবারের বিধ্যায়ক ইউনুস আলি সরকারকে সরিয়ে ৬৭ বছরের সইফুল ইসলাম মোল্লাকে প্রার্থী করেছিল দল। তাই নিয়েই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধেছিল দলে। আবার পঞ্চায়েতে বিজেপি ও তৃণমূলের ঘরে ফাটল ধরিয়ে নিজেদের ভাল ফল করেছিল সিপিএম। কংগ্রেসও এই এলাকায় অপ্রাসঙ্গিক নয়।

তবে মুর্শিদাবাদ আসন যে তাদের অন্যতম দাবি সেই বার্তা দিতে আগেই কৌশল নিয়েছিল সিপিএম। ‘ইনসাফ যাত্রা’র একটা বড় রুট ছিল এই লোকসভা কেন্দ্রের একাধিক বিধানসভা কেন্দ্র। ভগবানগোলা, জলঙ্গি, রানিনগর, ডোমকল, হরিহরপাড়া হয়ে বহরমপুরে ঢুকেছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বহু তরুণ নেতাকে প্রার্থী করে নির্বাচনী লড়াইতে নেমেছিল সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, জোটের দরকষাকষিতে মুর্শিদাবাদ আসন সিপিএম পেলে ফের বদরুদ্দোজা খানকে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। স্বাভাবিকভাবেই কোনও তরুণ মুখ এনে ওই আসন ফের নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া সিপিএম। তাই আগেভাগে কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরি করে রাখল বলেই মত রাজনীতির কারবারীদের।